বৃহস্পতিবার

রিকশা চালিয়ে অনার্স পড়ছে হাসিব

রিকশা চালিয়ে অনার্স পড়ছে হাসিব
ঢাকা, ২৫ মে- তখন বিকেল ৫টা। রিকশায় উঠলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) আল বেরুনী হলের সামনে থেকে। রিকশা চালক ছেলেটিকে দেখে মনে হলো আমার বয়সী। তারপর একটু কৌতুহল জাগলো মনের মাঝে। কেনইবা ছেলেটি এ বয়সে রিকশা চালায়। কোথায় তার বাড়ি? অবশেষে বিভিন্ন খোঁজখবর নিয়ে গল্প জুড়ে দিলাম। 
নাম হাসিব। বাড়ি তার পঞ্চগড় বোদা থানায়। মাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ আর উচ্চ মাধ্যমিকে জিপিএ ৪.৫৬ পেয়েছে সে। স্বপ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। চোখে সেই স্বপ্ন নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর কিছুদিন রিকসা চালিয়ে কিছু টাকা জমায় সে। তারপর ঢাকার যাত্রাবাড়িতে একটা কোচিংয়ে ফ্রি ভর্তি হয়। 
কিন্তু সেখানেও বিড়ম্বনা। মেসের টাকা দিতে না পারায় মাঝে মাঝে তাকে রিকশা চালাতে হতো। তবুও চোখে তার একটিই স্বপ্ন। কোনো একদিন সে-ও আর দশজন ছাত্রের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করবে। উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে পরিবার ও সমাজের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করবে। কিন্তু ইঁদুর কপালে হলে কী আর করা। 
আক্ষেপটা থেকেই গেল হাসিবের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারায় স্বপ্নপূরণ হল না তার। ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও। কিন্তু সেখানেও হয়নি। স্বপ্ন ভুলে ব্যর্থ মনোরথে অবশেষে সে ভর্তি হয় সরকারি তিতুমীর কলেজে, সমাজকল্যাণ বিভাগে।
রিকশায় বসেই কথা হচ্ছিল তার সঙ্গে। ঢাবি কিংবা জাবির মতো বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার সুযোগ না হলেও কণ্ঠে তার দৃঢ় প্রত্যয়ের সুর ধ্বনিত হচ্ছে। সে এগিয়ে যেতে চায়। কিন্তু একান্ত ইচ্ছে আগ্রহ থাকার পরও এগিয়ে যাওয়ার পথে বারবারই কণ্টকাকীর্ণ হয়ে উঠছে তার কাঙ্ক্ষিত পথ। তবু পথের কাঁটা সরিয়ে সে এগোবেই- এমনই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হাসিব। 
তিতুমীর কলেজে ভর্তি হওয়ার পরও অনটন তার পিছু ছাড়ছে না। টাকার অভাবে এখন সে মেসে উঠতে পারছে না। এতে প্রথমে দুটি ক্লাস করতে পারলেও এখন ক্লাসে যেতে পারছে না। তার না আছে কোনো টিউশনি, না পার্ট টাইম চাকুরি। 
জীবনযুদ্ধে নেমে তাই কখনো কখনো বড় হওয়ার স্বপ্নটাই ফ্যাকাসে হয়ে উঠে হাসিবের। ব্যর্থতায় ক্লান্তিতে কালো মেঘ জমে তার আকাশজুড়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হার মানেনি সে! কোনো কিছুই যখন মিলছিলো না তখন একান্ত বাধ্য হয়েই বেছে নেয় রিকশা চালনোর কাজ। এক পর্যায়ে রিকশা চালাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখে হাসিব। তার বড় দুঃখ- তার বন্ধু এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সে এখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই রিকসা চালক।
ভবিষ্যৎ স্বপ্নের কথা জানায় হাসিব। শিক্ষক হয়ে দেশ ও জাতির সেবা করতে চায় সে। তার মতে ‘যত কষ্টই হোক আমি পড়া চালিয়ে যাব’। সেজন্য সে এখন সপ্তাহে ৩০০ টাকা ভাড়া দিয়ে রিকশা চালাচ্ছে। কিছু টাকা জমিয়ে সে মেসে উঠবে। তারপর টিউশনি খুঁজবে। একটি ভাল টিউশনি পেলেই তার পড়াশোনায় বাঁধা থাকবে না- এটা তার বিশ্বাস। তারপর সে তার স্বপ্নপূরণে পুনরায় কদম গুনে এগিয়ে যাবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন