শুক্রবার

প্রেমিকা বলে হয় অবৈধ যৌনমিলন করতে হবে, তানাহলে…

 

 

আমি একটি মেয়ের সঙ্গে দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে সম্পর্কে জড়িয়ে আছি। ওকে আমি যেমন হৃদয় থেকে ভালোবাসি, ঠিক তেমনি ও নিজেও আমাকে ভালোবাসে। আগে কোনোদিন ওকে আমি হিজাব ছাড়া দেখিনি। অথচ ও নামকরা মেডিকেল কলেজে পড়ছে। ওকে আমি ওর ধর্মীয় ও নারী সচেতনতার কারণে শ্রদ্ধা করি গভীরভাবে। দীর্ঘ এই সময়ে কোনোদিন ওর কাছাকাছি বসতে পারিনি। হয়তো সামনে, না হয় এক হাত দূরে বসতে ও আমাকে বাধ্য করত। ওর সঙ্গে মাসে বা পনের দিনে একবার দেখা হতো। ফোনে কথা হতো। বেশিরভাগ সময়ই এস.এম.এস এর মাধ্যমে যোগাযোগ হতো। যা আমি আর ও বুঝত। ও আর আমি উভয়েই একটি সমস্যায় থাকতাম- যখন তখন কেউ কারো সঙ্গে কথা বলতে পারতাম না। ওর সঙ্গে কখনও রোম্যান্টিক কথা বলতে গিয়ে সামান্যতম অভদ্রতা করতে দিতো না। ওর একটিই কথা- ‘আমি তোমার প্রেমিকা হয়েছি, বৌ নয়’। যখন বৌ হব তখনের জন্য রাখো’।

 

সব ঠিকঠাকই ছিল। রমজানের দুমাস আগে থেকে দেখছি ও আমাকে বারবার উল্টা পাল্টা এস.এম.এস করে যাচ্ছে যা ওর স্বভাব বিরোধী। কারণ জিজ্ঞাসা করলে ও অস্বীকার করে, আমাকেই খারাপ ভাবে! অভিমান করে। রোজার কয়েক দিন পূর্বে ওর সঙ্গে দেখে হয়েছিল, তখন ও একদম আমার গা ঘেঁষে বসে কথা বলেছিল। ওকে কয়েক বার বলার পর এমনকি আমি নিজে সরার পরও কাজ হয়নি। হঠাৎ ঈদের দুদিন আগে বলেছে- ‘চলো ঈদে কোথাও ঘুরে আসি’। আমি প্রথমে না বললেও পরে রাজি হই। আমি জানতাম ওকে নিয়ে কাছে কোথাও কয়েক ঘণ্টা ঘুরে আসলেই চলবে। ও ঈদের রাতে কল করে বলে- ‘চল আমরা দুজন কক্সবাজার যাই! প্রথমে মনে করেছি মজা করছে, পরে দেখলাম না, ও সিরিয়াস! তখন অনেক বোঝানোর পর- জেদ করে না বলে দেয়। কিন্তু হঠাৎ করে ঈদের তিনদিন পর বলে- ‘চলো, প্রেমিক-প্রেমিকারা যা করে আমরাও তা করি’। আমি অনেক দুষ্টামি করার পর ওর কথার সারমর্ম বের করলাম- শারীরিক সম্পর্ক করা। ওকে বলি- তোমার কি মাথা নষ্ট হয়ে গিয়েছে! জানো না, এসব করার পর আমার থেকে তোমার সমস্যা বেশি হবে। তখন ও আমাকে জিজ্ঞাসা করে- ‘তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে না? করলে তার আগে করলে সমস্যা কী? সবাই তো করছে। যা করতে হবে আমি করব, তুমি শুধু নিরাপদ জায়গা খোঁজো’।

 

তখন অনেক ভাবে আমি ওকে বোঝালাম। এসবের ক্ষতি সম্পর্কে কয়েকটি ই-বুক নামিয়ে দিলাম, ও যাতে পড়ে এর ক্ষতি সম্পর্কে জানতে পারে। না, ও পড়েনি; বলেছে- হয় আমাকে বিয়ে কর, না হয় সম্পর্কের ব্রেকআপ। আমি কারণ জানতে চাইলে বলে তুমি আমাকে বিয়ে করবে না তাই আমার কথা রাখছো না। আমি বুঝতে পারছি না- কী এমন হলো! ওকে একেবারে আমার কাছে অপরিচিত মনে হচ্ছে। ওই তো আমাকে বলতো হাত না ধরেও চলা যায়, মনের মিল থাকলে হয়। তোমাকে ভালোবাসি, তাই বলে হাত ধরার অধিকার দেইনি। সেই অধিকার একমাত্র আমার স্বামীর, প্রেমিকের নয়। এমন মেয়ে কীভাবে বদলে গেল! ওর একটি বড় বোন রয়েছে অবিবাহিত। আমারও রয়েছে। ওর যেমন লেখাপড়া শেষ হয়নি, আমারও হয়নি। ওকে বলেছি তোমার ডাক্তারি পড়া শেষ হোক, আমিও নিজের ক্যারিয়ার গড়ে নিই। তোমার বোনদের বিয়ে হয়ে গেলে তোমার পালা আসবে তখন সামাজিক ভাবেও ভালো হবে। কিন্তু ও বুঝতে চায় না। হয় অবৈধ মিলন করো না হয় বিয়ে, কোনটিই না করলে সম্পর্ক ইতি টানার হুমকি! কিন্তু আমার দ্বারা কোনটিই সম্ভব নয়। অবাধ্য কাজ করতে পারব না আল্লাহর ভয়ে। আমি ওকে বিয়ে করব, কেউ কি চায় তার বৌকে নিয়ে কেউ বাজে ধারনা রাখুক। কেউ কি এটা মানতে চায় যে তার সন্তানের মা বিয়ের আগেই অবাধ্য সম্পর্কে লিপ্ত ছিল। কেউ কি চায় তার প্রথম সন্তান নষ্ট হোক। না আর বলতে ইচ্ছা করছে না। বিয়ে করতে পারব না। আমার মা-বাবা ভাই বোন ও ওর-আমার উভয়ের পরিবারের কারণে।

 

আমরা যদি গোপনে বিয়ে করি, তা কয়দিন গোপন রাখতে পারব? বিয়ে করলে বাবাকে সারা জীবনের জন্য হারাতে হবে, তেমনি চলে যাবে পরিবার ও নিজেদের মানসম্মান। তাঁদের কোনো রকম ক্ষতি হোক আমি তা চাই না। আমি নিজে চলি বাবার টাকায়। এখন বিয়ে করলে ওর ডাক্তারি পড়া হয়তো আর হবে না। ও আমাকে বলে- ‘তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না’। কোনো একটা কিছু করো, না হয় আমি শুধু তোমার জীবনই নয়, সবার জীবন থেকে হারিয়ে যাব। আমিও পারব না ওকে ছাড়া থাকতে। ওই আমার প্রথম, ওই আমার শেষ। ওকে হারিয়ে ফেলার জন্য আমি প্রেম করিনি, ওকে পাবার জন্য প্রেম করেছি। আমার আর ওর বিয়ের কথা ওঠাব কেবল সেই সময়ই যখন পরিবার অথবা সমাজ কোনটিই বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। আমাদের প্রেম সম্পর্কে ও আর আমি এবং অল্প কয়েকজন লোক জানে, তাঁরা গভীরভাবে ওকে শ্রদ্ধার চোখে দেখে। আর হ্যাঁ, আমি ওর পরিবর্তনের কথা জিজ্ঞাসা করলে ও কিছুই বলে না। উল্টা আমাকে বলে স্বার্থপর। এখন আমি কী করতে পারি?

 

আপনার চিঠি পড়ে আসলেই খুব বেশি অবাক হচ্ছি ভাইয়া! কারণ এমন চিঠি এতদিন মেয়েরাই লিখেছে যে সঙ্গী শারীরিক সম্পর্কের জন্য চাপ দেয়। আপনার ক্ষেত্রে ব্যাপারটি একেবারেই উল্টো।

হ্যাঁ, আমি মানছি যে এত নির্দিষ্ট বয়সে এসে সব প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষেরই শরীরের একটা চাহিদা তৈরি হয়। কিন্তু বিয়ের আগ পর্যন্ত অনেকেই ব্যাপারটি নিয়ন্ত্রণ করা শিখে নেন। আপনার প্রামিকা যেখানে হাতও ধরতে দিতেন না, তাঁর রাতারাতি এমন পরিবর্তন আসলেই প্রচণ্ড অবাক করার মত। এটার একটাই ব্যাখ্যা হতে পারে ভাই, তিনি আগে যা দেখিয়েছেন সেই সবই নকল ছিল। আপনার চোখে ভালো সাজতেই তিনি এসব করেছেন। ভেবেছিলেন আপনি পুরুষ, আপনি নিজেই হাত বাড়াবেন তাঁর দিকে। কিন্তু আপনি যেহেতু বাড়ান নি, প্রেমিকা এখন অধৈর্য হয়ে নিজেই স্টেপ নিয়েছেন।

 

 

ভাইয়া, আমার মনে হয় পুরো বিষয়টি নিয়ে আপনার খুব ভালো করে ভাবার দরকার আছে। কারণ কেবল হিজাব পরলেই ধর্ম হয় না। যে মানুষ হিজাব করেন কিন্তু প্রেমিকের সাথে অবৈধ সম্পর্ক করার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছেন, সে আসলে কতটা ধর্মপ্রাণ এইটা নিয়ে আমার বেশ সন্দেহ হচ্ছে। বিয়ে করার তো প্রশ্নি ওঠে না। আপনি বরং মেয়েটিকে সাফ জানিয়ে দিন যে এই ধরণের মেয়ের সাথে আপনি কোনভাবেই সম্পর্ক রাখবেন না, কারণ আপনার আল্লাহ আপনাকে সেই অনুমতি দেয় না। প্রেমিকা যদি সত্যিই আপনাকে ভালোবেসে থাকে, সে নিজেকে সংশোধন করে সুপথে আসবে। কিন্তু সে যদি উল্টো আপনাকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে, জানবেন যে প্রেমিকার সবই ভড়ং ছিল। সেক্ষেত্রে এমন মেয়ের সাথে সম্পর্ক না রাখাই উত্তম হবে ভাইয়া।

পরামর্শ দিয়েছেন-
রুমানা বৈশাখী
লেখক ও রন্ধনশিল্পী

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন