বুধবার

তিন পরিবারের ঘুম হারাম করেছিল সুন্দরী শ্যালিকা

 

শম্পা আক্তার। বয়স ২৮ বছর। বাড়ি নাটোর জেলার নলডাঙ্গা উপজেলার খাজুরা উজানপাড়া গ্রামে। একই গ্রামে বাড়ি খালাতো বোন ববিতা আক্তারের। আর ওই গ্রামেরই শেষ মাথায় এসআই সাত্তারের বাড়ি। ১২ বছর আগে যখন পারিবারিকভাবে সাত্তার আর ববিতার বিয়ে হয় তখন শম্পা এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন।

তার আগে শম্পা যখন ক্লাস নাইনে পড়েন তখন পরিচয় হয় সাত্তারের সঙ্গে। সম্পর্ক মোটামুটি প্রেমের পর্যায়ে গড়ালেও পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় ববিতার সঙ্গে। বিয়ের পর ববিতা জানতে পারে খালাতো বোন শম্পার সঙ্গে সাত্তারের প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। অভাবের সংসারে চাকরিটা চলে যাবে ভেবে ববিতা কাউকে কিছু বলেনি। এদিকে, এসআই সাত্তার (৩২) সম্পর্কে জানা যায়, ১৯৮৫ সালের পহেলা মার্চ নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার খাজুরা উজানপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম রমজান আলী।

২০০৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সাত্তার পুলিশের কনস্টেবল পদে যোগদান করেন। ২০১২ সালে পদোন্নতি পেয়ে এএসআই হন এবং সবশেষ ২০১৬ সালে আবার পদোন্নতি পেয়ে এসআই হয়ে বাড্ডা থানায় যোগদান করেন। মিরপুরের ইস্টার্ণ হাউজিং এলাকায় বাসা ভাড়া করে ববিতাকে নিয়ে সংসার শুরু করেন নিজের গুলিতে নিহত এসআই সাত্তার। ববিতার ঘরে একে একে দুটি ছেলে সন্তান আসে।

প্রথম ছেলের নাম সাকিব আল হাসান (১০)। আর দ্বিতীয় ছেলের নাম সাদিক বিন সাত্তার (৪)। গত রোববার পুলিশ, নিহত সাত্তারের ছোটভাই বাবুল এবং সাত্তারের স্ত্রী ববিতার সঙ্গে কথা বলার সময় এসব তথ্য পাওয়া যায়। এসআই সাত্তারের স্ত্রী ববিতা আক্তার বলেন, একটা সময় বুঝতে পারি, স্ত্রী আর ছেলেদের সময় না দিয়ে শম্পার প্রতি কেন বেশি বেশি খেয়াল রাখেন।
এও বুঝতে পারি দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক টাল-মাটাল অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। কথায় কথায় ঝগড়া লাগতো। বড় ছেলে এসব দেখে কান্নাকাটি করতো। ছোট ছেলের দিকে তাকানো যেত না। ঝগড়াঝাটি আর মারামারি দেখে নীরবে কান্না করত। এক সময় সিদ্ধান্ত নেয় সাত্তার, দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি চায় নয়তো প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেবে। সংসার আর দুই ছেলের কথা চিন্তা করে শম্পাকে বিয়ে করার অনুমতি দেয় ববিতা। এরপর এক বছর আগে শম্পা আর সাত্তার বিয়ে করেন। বিয়ে করে তারা রুপনগর আবাসিক এলাকার ২২ নম্বর সড়কের ৩২ নম্বর বাসার ছয় তলায় ফ্লাট ভাড়া করে দ্বিতীয় সংসার শুরু করেন। দ্বিতীয় সংসার শুরু করার পর প্রথম সংসারে তেমন যাতায়াত ছিল না।

মাঝে মধ্যে দিনে গেলেও খুব একটা সময় কাটাতেন না বলে অভিযোগ করেন ববিতা। ‘এমনকী দুই সন্তান বাবার জন্য পাগল হলেও বাবা কোনোদিন সময় দিত না। এরপরেও কিছু বলতাম না। কারণ কিছু বলতে ভয় করতো। যদি মাসের খরচ বাবদ টাকাটা বন্ধ করে দেয়। ভাবতাম ওরাই সুখে থাক। আর আমি ছেলে সন্তান নিয়ে দিনাতিপাত করি’, বলেন ববিতা। নিহত এসআই সাত্তারের ছোটভাই বাবুল বলেন, ‘শম্পাকে বিয়ে করায় তিন পরিবারের মধ্যেই সুখ নষ্ট হয়ে যায়। ভাইয়ার দুই শ্বাশুড়ীর মধ্যে দ্বন্দ্ব বেঁধে যায়। কেউ কারো বাড়িতে যাতায়াত করেন না। ভাইয়াও কোনো শ্বশুর বাড়িতে যেতেন না। আর এ কারণে নিজের পরিবারও ভাইয়ার এসব কাণ্ড-কারবার সহজে মেনে নেননি।

বিয়ে করে তো ভাইয়া ও শম্পা ভাবি ভালই ছিল। কিন্তু আত্মহত্যা করতে গেল কেন, তা বুঝতে পারছি না।’গত রোববার রুপনগরের ২২ নম্বর সড়কের ৩২ নম্বর বাসার ছয় তলার ফ্লাটে গিয়ে দেখা যায় ফ্লাটটির দরজায় তালা লাগানো। পরে তৃতীয় তলার বাসিন্দা তাইয়েবা আক্তার বলেন, পুলিশের কাছ থেকেই প্রথম গুলি হওয়ার কথা জানতে পারি। পরে পুলিশ দরজা ভেঙ্গে দুইটি মরদেহ উদ্ধার করেন। ওই ভবনের পাশের ফ্লাটের বাসিন্দা সামাদ তালুকদার বলেন, ‘বিকেল ৫টার দিকে পুলিশ এসে দরজা ভাঙ্গা শুরু করলে সবাই জানতে পারে যে, গুলিতে দুজন মারা গেছে। পরে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। তবে কখন গুলি হয়েছে এরকম কোনো শব্দ কেউ শুনতে পায়নি বলে জানান সামাদ।’

অন্যদিকে, রোববার সন্ধ্যায় রুপনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সৈয়দ সহিদ আলম বলেন, পুলিশের এক সোর্সের মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে এসআই সাত্তার ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী শম্পার মরেদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানতে পারি, হঠাৎ করেই শ্যালিকাকে বিয়ে করা নিয়ে পারিবারিক জীবনে অশান্তি নেমে আসে। এ বিয়েতে তার নিজের পরিবার ও দুই স্ত্রীর পরিবারের কেউ বিষয়টি মেনে নেয়নি। যে কারণে পারিবারিক দাম্পত্য কলহ বড় আকার ধারণ করে। যার জের ধরে দ্বিতীয় স্ত্রী শম্পাকে নিজের পিস্তল দিয়ে গুলি করে খুনের পর আত্মহত্যা করেন এসআই সাত্তার। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। আরেকটি হত্যা মামলা হতে পারতো। তবে যে হত্যা করেছে তিনি তো আত্মহত্যা করেছেন। তাই এখানে আসামি ‘সাসপেক্ট’। এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে হত্যায় ব্যবহার করা পিস্তলটিও উদ্ধার করা হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন