আমার বর্তমান বয়স ১৯ বছর। ২০১৪ সালে প্রথম আমি একজনকে ভালোবেসেছিলাম। সে সময় সে আমাকে শারীরিক সর্ম্পক করতে বলে। আমি অনেক নিষেধ করার পরও পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে শারীরিক সর্ম্পকে জড়িয়ে যেতে হয়। সর্ম্পকটা চলতে চলতে একদিন একবাসার রুমে এলাকার দুই বড়ভাই আমাদের দেখে ফেলে। তারা ওকে সিগারেট আনার কথা বলে বাসার বাইরে পাঠিয়ে দেয় এবং জোরপূর্বক আমার সঙ্গে ওরা ২ দুজন এক এক করে শারীরিক সর্ম্পক করে, এটাকে এক প্রকার ধর্ষণই বলা যায়। যতক্ষণে ও বাসায় ফেরে ততক্ষণে আমার সর্বনাশ হওয়া শেষ।
ও আমাকে সেদিন বলেছিল আমার জন্য হয়েছে তাই ওদের দেখিয়ে দেবো ভালবাসা কী। আমাকে প্রমিজও করে কোনদিনও ছেড়ে যাবে না কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত আমাদের সর্ম্পকটা তিনমাসেই ভেঙ্গে যায়। আমি অনেকবার আত্নহত্যা করার চেষ্টা করেছি। একদিন আত্নহত্যার চেষ্টা করে তিনদিন আইসিইউ-তে অজ্ঞান ছিলাম। কথাগুলো আর গোপন থাকে নি। আমাকে সবাই অনেক খারাপ নজরে দেখতে শুরু করে কিন্তু আমার সেই প্রেমিক আমাকে আজ পর্যন্ত খারাপ বলে নি, কারণ দোষটা তার ছিল।
এরপর অনেকদিন মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলাম। ২০১৫ সালে একজনের সঙ্গে সর্ম্পকে জড়িয়ে পড়ি। কিন্তু বিষয়গুলো জানতো না। সাত আটমাস ছিল সর্ম্পকটা। জানার পর প্রথমে মেনে নিতে পারে নি। যখন ফিরে এলো তখন আমি বারবার তাকে ফিরিয়ে দিয়েছি। তখন শুধু মনে হতো আমি আমার প্রথম প্রেমিক ছাড়া কাউকে ভালোবাসতে পারব না, আর আজ পর্যন্ত পারিও নি। এরপর থেকে কোনো ছেলেকে বিশ্বাস করতে পারি নি। মনে হতো সবাই তারমতো প্রতারক, মিথ্যুক। এরপর আমি আর সর্ম্পকে জড়াই নি। রাতে ভীষণ কাঁদতাম। সবাই আমাকে নিয়ে বাইরে বাজে কথা বলত। আমি যেটা করি নি, সেটাও জড়িয়ে দিতো। বেঁচে থাকার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে ছিল না। তাই মাঝে মাঝেই ২০-৩০টি ঘুমের ওষুধ একসঙ্গে খেতাম।
২০১৫ সালের ডিসেম্বরে একজনের সঙ্গে আমার ফোনে পরিচয় হয়। সে বলত- সে আমাকে অনেক ভালোবাসে আমি তাকে ভালো না বাসলেও যেন ভালোবাসতে নিষেধ না করি। তবুও আমি তাকে বিশ্বাস করতে পারি নি। তার পরিবারের পরিচিত ভাইবোনরাও বলত ও তোমাকে অনেক ভালোবাসে। তবুও মিথ্যা মনে হতো সব। আমার ছোটভাই আর একবন্ধু সব জানত। ওরাও বলতে শুরু করল। এবার সত্যিই তোর জীবনে ভালো কেউ এসেছে। একে ছেড়ে দিয়ে ভুল করিস না। ২০১৬ সালে সবার কথা চিন্তা করে আমি রাজি হই, আর বিশ্বাস করতে ভালোবাসতে শুরু করি প্রথমজনের মতো করেই। সর্ম্পকের কয়েক মাসের মধ্যেই সেও আমার সঙ্গে শারীরিক সর্ম্পক করে। তবে সে আমার বিষয়ে সব জেনেই সর্ম্পকটা করেছিল বলে আমি তার সব কথাই বিশ্বাস করতাম। তবে প্রথমে অবিশ্বাস করতাম। কোনকিছুই আমার সহজে বিশ্বাস হয় হতো না। তবুও সে আমাকে ভালবাসত।
কিন্তু একদিন জানতে পারলাম সে আমার একবছরের ছোট ছিল, এবং সে আরও মেয়ের সঙ্গে সর্ম্পক করত। সে আমাকে ভালোবাসে না। তবুও সব মেনে আমি তারসঙ্গে সর্ম্পক রাখতে চাই। কিন্তু সে চায় না। আমি আবারও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি। আমার শুধু মনে হতো- আমি আমার জীবনের সব হারিয়ে ফেলেছি। কিচ্ছু নেই আমার জীবনে। এখন শুধু মনে হয় পৃথিবীর সব ছেলেই এক। সবাই ভণ্ড, প্রতারক, মিথ্যুক। আমি এখন আর কোন ছেলেকেই বিশ্বাস করতে পারি না। কোন ছেলের সামনে একা যাই না। কারও চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারি না। কেউ ভালোবাসার কথা বললেই মনে হয়- তারা শুধুমাত্র আমার শরীরকে ভালোবাসে। দুবছর ধরে এই মানসিক যন্ত্রনা সহ্য করে আসছি। বেশি খারাপ লাগলে ঘুমের ওষুধ (medicine) খাই। গত দুবছর থেকে আজ পর্যন্ত ২০০-২৫০ ঘুমের ওষুধ খেয়েছি। আমার অতীত গুলোকে কিছুতেই ভুলতে পারছি না আর এসব জানার পর কোন সর্ম্পকই দীর্ঘ স্থায়ী হচ্ছে না। আমার কী করা উচিত এখন?
প্রথমেই বলি আপু, তুমি এখন পর্যন্ত যেভাবে তোমার জীবন চালিয়েছ সেটা একেবারেই ভুল। আগাগোড়া ভুল। মাত্র ১৯ বছর বয়স তোমার, এরই মাঝে তুমি এতগুলো শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়েছ, ধর্ষণের শিকার হয়েছ, আত্মহত্যার চেষ্টা করেছ, এতগুলো ব্রেক আপ হয়েছে… সব মিলিয়ে তোমার চিঠি পড়ার পর আমি ভীষণ চিন্তিত বোধ করছি। কেননা এখনোই যদি জীবনের এই ভুলগুলোকে তুমি শুধরে নিতে না পারো, ভবিষ্যৎ তোমাকে অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই দেবে না।
প্রথমত বলি, তুমি যেটা বলছো -“এটাকে এক প্রকার ধর্ষণই বলা যায়”… সেটা আসলে ধর্ষণ!!! প্রেমিকের সাথে রুম ডেটে গিয়ে এমন ধর্ষিত হবার ঘটনা ভুরি ভুরি। আমি জানিনা তারপরও কেন তোমরা মেয়েরা সতর্ক হও না। মানলাম সেটা দুর্ঘটনা ছিল। কিন্তু প্রথম প্রেমেই এতকিছু হয়ে যাবার পর তুমি আবারও একাধিক প্রেমে জড়িয়েছ এবং সেই প্রেমে শারীরিক সম্পর্কও করে ফেলেছ, এটা হচ্ছে ভুল। প্রেমকে শরীর পর্যন্ত কোনভাবেই যেতে দেয়া উচিত নয় এত অল্প বয়সে। কারণ আজকাল প্রেম এত বেশি শরীর নির্ভর হয়ে গিয়েছে যে সবাই শরীর পাবার জন্যই প্রেম করে। যে প্রেম টিকিয়ে রাখার জন্য শারীরিক সম্পর্ক করতে হবে তোমাকে, জেনে রাখবে সেই প্রেমের কোন ভবিষ্যৎ নেই।
তুমি এখনো ছোট। অনেক অনেক অনেক বেশি ছোট। প্রেম বিয়ে নিয়ে এখন তোমার চিন্তা না করলেও চলবে। তুমি প্রথমে যেটা করবে, সবার আগেই একজন ভালো মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাবে ও চিকিৎসা করাবে। প্রয়োজনে নিয়মিত কাউন্সিলিং করাবে। তারপর মন এদেবে নিজের পরিবার ও লেখাপড়ার দিকে। বন্ধু বান্ধবী ফেসবুক ফোন- এই সমস্ত জিনিস থেকে দূরে থাকবে, যেগুলো তয়ামকে অপরিচিত মানুষের সাথে পরিচয় করায়। তুমি মানুষ চিনে পারো না এখনো, তাই নিজের লেখাপড়া শেষ হবার আগে প্রেমে জড়ানোর চেষ্টাই করবে না।
একটা জিনিস মনে রাখবে, কোন পুরুষ তোমাকে কখনো ভালো রাখতে পারবে না। ভালো থাকতে চাইলে তোমার নিজেই নিজেকে ভালো রাখতে হবে। এবং নিজের নিরাপত্তার দায়িত্ব জীবনে নিজেকেই নিতে হয়।
পরামর্শ দিয়েছেন-
রুমানা বৈশাখী
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন